সুন্দরবনের মধু বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত ও বিশেষ পণ্য। এটি মূলত সুন্দরবনের গাছে জন্মানো ফুল থেকে মৌমাছিদের সংগ্রহ করা প্রাকৃতিক মধু। সুন্দরবনের মধুর গুণাগুণ ও বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
১. প্রাকৃতিক উৎস
সুন্দরবনের প্রধান ফুল, যেমন খলসী, গরান, ও গেঁওয়া গাছের ফুল থেকে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। এই ফুলগুলির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য মধুকে অনন্য ও সুস্বাদু করে তোলে।
২. স্বাস্থ্যগুণ
সুন্দরবনের মধুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমে সহায়তা করে, এবং কফ, সর্দি ও গলাব্যথা নিরাময়ে কার্যকর।
৩. স্বাদ ও গন্ধ
সুন্দরবনের মধু সাধারণত ঘন, সুগন্ধি এবং হালকা সোনালি বা গাঢ় বাদামি রঙের হয়। এর স্বাদ সামান্য তেতো-মিষ্টি ধরনের, যা অন্যান্য মধুর চেয়ে আলাদা।
৪. অর্থনৈতিক গুরুত্ব
সুন্দরবনের মধু স্থানীয় মৌয়ালরা (মধু সংগ্রহকারী) সংগ্রহ করেন। এটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে অত্যন্ত চাহিদাসম্পন্ন। বিশেষ করে বিদেশে এটি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য।
৫. সংগ্রহ প্রক্রিয়া
মৌয়ালরা সাধারণত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে মধু সংগ্রহ করেন। এই সময় মৌমাছিরা প্রচুর মধু তৈরি করে। মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে মৌয়ালদের বাঘ ও অন্যান্য বন্য প্রাণীর সঙ্গে বিপজ্জনক মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৬. পরিবেশগত গুরুত্ব
সুন্দরবনের মধু শুধু পুষ্টিকর নয়, এটি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মৌমাছিরা ফুলের পরাগায়ন করে, যা গাছের প্রজনন ও বনাঞ্চলের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য।
সুন্দরবনের মধু শুধু একটি পণ্য নয়, এটি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের একটি অংশ। এটি তার স্বাস্থ্যগুণ ও বৈশিষ্ট্যের জন্য স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত।